প্রচন্ড গরমে সুস্থ ও ঠাণ্ডা থাকার সর্বোত্তম উপায়: ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক এবং ক্লান্তি এড়াতে 25টি কার্যকরী টিপস
হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, সানস্ট্রোক বা ত্বকের সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান? এই গ্রীষ্মে সুস্থ থাকার জন্য 25টি চেষ্টা করা এবং পরীক্ষিত ঘরোয়া প্রতিকার জানুন।
🌞 গ্রীষ্মের তীব্র গরমে নিজের যত্ন
নেবেন যেভাবে
বাংলাদেশসহ
উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে যায়, এমনকি কোথাও কোথাও তার
চেয়েও বেশি হয়। এই সময়ে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং হিটস্ট্রোক, মাথা ঘোরা, ত্বকের
সমস্যা, ঘামাচির মত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য গরম
অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
তাই চলুন
জেনে নেই এই গরমে সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য বিস্তারিত ২৫টি কার্যকর পরামর্শ।
🥤 ১. প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস পানি পান
করুন
শরীর ঠান্ডা
ও হাইড্রেটেড রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান করা। শুধুমাত্র পিপাসা
লাগলে নয়, নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করুন। গরমে ঘাম বেশি হয় বলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে
যায়, তাই ঘাটতি পূরণ করতে বেশি পানি লাগবে।
অতিরিক্ত
পরামর্শ:
- প্রতি ঘণ্টায় অল্প করে পানি পান
করুন।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস কুসুম
গরম পানি খান।
- বাইরে বের হলে সাথে পানি বা ওআরএস
(ORS) রাখুন।
🧃 ২. প্রাকৃতিক শরবত ও তরল খাবার খান
লেবুর শরবত,
বেলের শরবত, ডাবের পানি, তেঁতুল পানি বা ঘরে তৈরি স্যালাইন গরমে খুব উপকারী।
পান করার
মতো কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয়:
- ইসবগুলের ভুসি ও লেবু মিশিয়ে
শরবত
- ঘরে তৈরি টক দই লাচ্ছি
- তালশাঁস বা ডাবের পানি
- জলপাইয়ের শরবত
বর্জনীয়: বোতলজাত সফট ড্রিংক, অতিরিক্ত চিনি
ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়।
👕 ৩. হালকা, সুতির ও ঢিলা জামাকাপড়
পরুন
গরমে ঘন,
কৃত্রিম কাপড় ঘামে আটকে গরম আরও বাড়িয়ে দেয়। সুতির হালকা জামাকাপড় পরলে শরীর শ্বাস
নিতে পারে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রঙ বাছাইয়ের
পরামর্শ:
- হালকা রঙ যেমন: সাদা, হালকা নীল,
পিচ
- কালো বা গা darkা রঙ এড়িয়ে চলুন,
কারণ এগুলো সূর্যের তাপ শোষণ করে
☂️ ৪. সরাসরি রোদে চলাচল এড়িয়ে চলুন
বিশেষ করে
দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সূর্য সবচেয়ে তীব্র থাকে। এই সময় বাইরে না বের হওয়াই শ্রেয়।
বের হতে
হলে করণীয়:
- ছাতা, সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন
ব্যবহার করুন
- হালকা রঙের হ্যাট বা ক্যাপ ব্যবহার
করুন
- ছায়া পথে হাঁটার চেষ্টা করুন
🥗 ৫. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
গরমে হজমশক্তি
কিছুটা কমে যায়। তাই সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন।
খেতে
পারেন:
- তাজা ফল (তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে,
আঙ্গুর, আনারস)
- সবজি স্যুপ, দই, ডাব
- ভাতের পরিবর্তে খিচুড়ি বা পাতলা
ডাল
- সেদ্ধ খাবার বা হালকা তেলে রান্না
বর্জনীয়:
- ভাজাপোড়া, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার
- বেশি চিনি ও কোল্ড ড্রিংক
- বাসি বা সংরক্ষিত খাবার
🚿 ৬. প্রতিদিন গোসল করুন
গরমে দিনে
২ বার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর ঠান্ডা থাকে, ক্লান্তি কমে এবং ঘামাচি থেকেও
মুক্তি পাওয়া যায়।
বিশেষ
টিপস:
- গোসলের সময় এক ফোঁটা মেনথল বা
গুলবসন মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরও সতেজ লাগবে
- শিশুদের দিনে ২ বার গোসল করানো
উচিত
💦 ৭. ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ও পা ধুয়ে
নিন
বাইরে থেকে
এসে মুখ, হাত ও পা ধুয়ে নিলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসে এবং ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়া
যায়।
❄️ ৮. ঘরে কৃত্রিম ঠান্ডা ব্যবস্থা ব্যবহার করুন
যদি এসি
না থাকে, তাহলে ফ্যানের পাশে ঠান্ডা পানি ভর্তি পাত্র রেখে দিন। এতে বাতাসে কিছুটা
ঠান্ডাভাব আসবে।
🌿 ৯. ঘরে সবুজ গাছ রাখুন
তুলসী, মানিপ্ল্যান্ট
বা অ্যালোভেরার মতো গাছ ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা কমায় এবং বাতাস বিশুদ্ধ রাখে।
🧴 ১০. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
বাইরে যাওয়ার
২০ মিনিট আগে ত্বকে SPF 30+ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়া ও দাগ থেকে
এটি রক্ষা করে।
😴 ১১. রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন
গরমে ঘুম
কম হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালোভাবে ঘুমান।
ঘুম ভালো
করতে:
- ঘুমানোর আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে
পা ধুয়ে নিন
- হালকা বিছানা, পাতলা চাদর ব্যবহার
করুন
- দরকার হলে নেট ফ্যান ব্যবহার
করুন
🧒 ১২. শিশুদের বিশেষ যত্ন নিন
শিশুরা ঘাম
বেশি করে এবং দ্রুত পানিশূন্যতায় পড়ে।
শিশুর
যত্নে:
- পাতলা সুতির জামা
- নিয়মিত গোসল
- বুকের দুধ (৬ মাসের নিচে হলে)
বা ঘরে তৈরি তরল খাবার
👴 ১৩. বয়স্কদের জন্য সতর্কতা
বৃদ্ধদের
হিটস্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশন দ্রুত হতে পারে।
পরামর্শ:
- প্রতিদিন পানি পান করাতে মনে
করিয়ে দিন
- দুপুরে বাইরে যেতে না দেওয়া
- ছায়াযুক্ত ঘরে বিশ্রাম নিতে উৎসাহ
দিন
🛏️ ১৪. ঠান্ডা বেডশিট ও পর্দা ব্যবহার
করুন
সাদা বা
হালকা রঙের বেডশিট ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। রোদের সময় পর্দা টেনে রাখুন।
🌬️ ১৫. ফ্যান বা কুলারের জায়গা পরিষ্কার
রাখুন
ফ্যান বা
কুলারের ধুলাবালি পরিষ্কার না থাকলে গরম বাতাস তৈরি করে। প্রতি সপ্তাহে তা পরিষ্কার
করুন।
🧼 ১৬. ঘামাচি থেকে বাঁচতে ত্বক পরিষ্কার
রাখুন
গরমে ঘামাচি,
চুলকানি বা র্যাশ হতে পারে।
প্রতিরোধে:
- দিনে ২ বার মুখ ধোয়া
- অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার
- গুঁড়ো মলম বা ঘরোয়া প্যাক
⚕️ ১৭. হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ চিনুন
হিটস্ট্রোক
হলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
লক্ষণ:
- মাথা ঘোরা
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব
- জ্ঞান হারানো
ব্যবস্থা:
- ঠান্ডা স্থানে শোয়ানো
- মাথা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দেওয়া
- ওআরএস বা স্যালাইন খাওয়ানো
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ
📛 ১৮. অফিস বা স্কুলে পানি বোতল নিয়ে
যান
চেষ্টা করুন
সবসময় এক বোতল পানি বা লেবুর শরবত সাথে রাখার।
👣 ১৯. পায়ে মোজা বা ঘন জুতা পরা এড়িয়ে
চলুন
গরমে পা
ঘেমে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
🥵 ২০. অতিরিক্ত কাজ না করে বিশ্রাম
নিন
গরমে শরীরের
উপর বেশি চাপ দিলে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজন মতো বিশ্রাম নিন।
🧘 ২১. মেডিটেশন বা হালকা যোগ ব্যায়াম
করুন
রাতে বা
সকালে হালকা যোগব্যায়াম শরীর ঠান্ডা রাখে ও মানসিক শান্তি আনে।
🧊 ২২. বরফ বা ঠান্ডা জেল প্যাড ব্যবহার
করুন
মাথা বা
কপালে ঠান্ডা জেল প্যাড ব্যবহার করলে ক্লান্তি দূর হয়।
💻 ২৩. কর্মস্থলে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল
নিশ্চিত করুন
আপনার অফিসে
পর্যাপ্ত ফ্যান, বাতাস চলাচল এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা আছে কি না খেয়াল রাখুন।
🍉 ২৪. পানিসমৃদ্ধ ফল বেশি খান
তরমুজ, বাঙ্গি,
কমলা, স্ট্রবেরি - এগুলো শরীর ঠান্ডা রাখতে খুব উপকারী।
❌ ২৫. কৃত্রিম এনার্জি ড্রিংক বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
এগুলো শরীরে
পানিশূন্যতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
✅ উপসংহার
অতিরিক্ত
গরমে নিজের যত্ন নেওয়া শুধু আরামের জন্য নয়, বরং এটা একটি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সচেতনতা।
সামান্য অবহেলাই বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই আজ থেকেই এগুলো মেনে
চলুন এবং নিজে সুস্থ থাকুন, পরিবারকেও সচেতন করুন।